অন্ধকারের জবানবন্দী এবং অন্যান্য
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক অথই নীলিমার পেশা শিক্ষকতা ও বিজ্ঞান গবেষণা হলেও নেশা তার বই পড়া এবং অনিয়মিতভাবে টুকটাক লেখালেখি করা। লেখালেখিতে হাতখড়ি মূলত শৈশবেই, ১৯৯২-৯৩ এর দিকে। ভোরের কাগজের ইষ্টিকুটুমসহ কিশোর পত্রিকা, ছোটদের কাগজ ও বিভিন্ন ছোটদের পাতায় বিভিন্ন সময় লেখালেখি করেছেন। "পড়াখেলা" নামে শিশুতোষ পত্রিকার ক্ষুদে সম্পাদক হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেছিলেন একদা, শিশুকালে।
More
“মিথ্যে নিজেকে প্রবোধ দিচ্ছ কেন মেঘ? এদেশে কোনও মেয়ের কি কোনরকমের নিরাপত্তা আছে? "
কে কথা বলে? কে? চারপাশে শুধু ধোঁয়া ধোঁয়া অন্ধকার দেখতে পায় মেঘ, আর কানে ভেসে আসে কিছু জড়ানোকণ্ঠস্বর, “মেঘ, এটা এমন একটা দেশ, যেখানে কোনও মেয়ে অন্যায়ের শিকার হলে তাকেই দোষী সাব্যস্ত হতে হয়। সে অন্যায় যেমনই হোক না কেন, হোক সে শ্লীলতাহানি, হোক সে সাইবার ক্রাইম কিংবা হোক সে রাস্তাঘাটে বখাটেদের উৎপাত। অপরাধী চোখের সামনে দিয়ে ঘুরে বেড়ায়, কেউ কিছু করার সাহস পায় না। এরকম একটা সমাজে তুমি কি ভাবে দেবে শিহাবের শাস্তি?”
মেঘ চমকে উঠে, ধোঁয়াটে অন্ধকার একটু একটু করে যেন স্পষ্ট হতে থাকে। কপালে লাল টিপ পড়া ওই মেয়েটি কি সিমি না? নারায়ণগঞ্জের চারুকলার ছাত্রী সেই সিমি? বখাটেদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে যে আÍহত্যার পথ বেঁচে নিয়েছিল। চিরকুটে লিখে গিয়েছিলঃ “ওদের অপমান একজন মেয়েকে রাস্তায় ফেলে রেপ করার চেয়েও নির্মম। ” সিমি ফিসফিসিয়ে চলে... “আমি তো প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। কি লাভ হয়েছিল, মেঘ? আমাকে তো চলে যেতেই হল। কি অপরাধ ছিল আমার?”
“ আত্মহত্যা সমাধান না। আপনি বেঁচে থাকতে, আরও বেশি লড়াই করতে পারতেন। এভাবে হেরে গেলেন কেন?”
“আর কত লড়াই করবো? আর কত?” সিমির দীর্ঘশ্বাস শুনতে পায় যেন।“ আমরা মেয়েরা তো জন্ম থেকেই হেরে চলেছি মেঘ। সেদিন আমি হেরেছি, কাল স্বাতী হেরেছে, ভবিষ্যতে অন্যরাও হারবে। প্রথম প্রথম খুব লেখালেখি হবে কাগজে, মিডিয়া তে তোলপাড় হবে, মিছিল হবে, সভা হবে, কিন্তু বিচার হবে না। বিচার হলেও তা কার্যকর হবে না। আমরা শুধু থেকে যাবো – খবর হয়ে, ইস্যু হয়ে ।” মেঘ মৃদু কণ্ঠে বলে, “কিন্তু... এভাবে আর কতদিন?” “হয়ত অনন্তকাল... ” সিমির পাশে আরও মেয়ের ভিড় বাড়ে, মেঘ দেখতে পায় ইলোরাকে, সাথীকে, ইয়াসমিনকে, এদেশের আরও নাম না জানা বহু মেয়েকে, যারা কোনও না কোনও ভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে, কিন্তু বিচার পায়নি। তাদের জ্বলজ্বলে চোখের অগ্নিদৃষ্টি মেঘকে একটু হলেও কাঁপিয়ে দেয়। আর লক্ষ কণ্ঠের হাহাকার ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হতে থাকে তার বাঁয়ে, ডানে, সামনে, পেছনে, চারিদিকে, মেঘ দু হাতে কান চেপে ধরে, কিন্তু সে হাহাকার বেড়েই চলে, আকাশ বাতাস আন্দোলিত করে তোলে, সে হাহাকার যেন বাড়ীর সীমানা পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। এক অজানা আশঙ্কায় মেঘ কেঁপে ওঠে, স্বাতী আর সিমি,ইলোরা আর ইয়াসমিন, দেশের আর সব ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে থাকা নারী সবাই যেন তার অনুভূতিতে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়, সে কেঁপে ওঠে, উদ্ভ্রান্তের মত ছুটে বেড়ায় একটুকরো আলোর আশায়, কিন্তু অন্ধকার সময় যেন তাকে চারপাশ থেকে চেপে ধরতে থাকে.....
Available ebook formats:
epub
mobi
pdf
lrf
pdb
txt
html